#বর্ষণ_সন্ধ্যায়_তোমার_আগমন
#সমাপ্তিপাতা
দেখতে দেখতে শরৎ, বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা বিদেয় নিলো,মাঝে দুইটা বছর চলে গেল খুব দ্রুত, নওশাদের এখনো মনে হয় বুঝি মাত্র প্রেমে পড়লো তার সানের কিন্তু আজ দুইটা বছর সান তার হওয়ার। সেদিন রাতেই সে দাদুর সাথে কথা বলেছিল, মানুষটা তাকে সঙ্গ দিয়েছিল, সানজিদা কে বুঝিয়েছিল খুব নিখুঁতভাবে, যদিও সানজিদা প্রথমে রাজি হয়নি পরে কেন জানি রাজি হয়েছিল, নওশাদ এর আর জানা হয়নি।তাদের তিন কপোত-কপোতীর একই দিনে বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু নিবিড় এর বিয়ের ব্যাপারে শুধু পরিবারের সবাই জানে,বাইরের কেউ জানে না।বড়রা ঠিক করেছে নিবিড় এর পড়া শেষ হলে ধুমধাম করে বউ ঘরে তুলবে। কিন্তু নিবিড় এবার বাংলাদেশ থেকে ফিরবার আগে সবাইকে ডেকে পইপই করে বলে দিয়েছে"তার বউ সে তার কাছে নিয়ে যাবে পরের বার আসলে" সবাই তার এই কথা নিয়ে হেসেছে কিন্তু তার সিদ্ধান্ত নড়েচড় হয়নি।নিশাতদের একটা কন্যা সন্তান হয়েছে।সানজিদা আর নওশাদ এর সম্পর্ক প্রথম প্রথম খাপছাড়া থাকলেও বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কিন্তু স্ত্রীর মুখে আর ভালোবাসি শুনা হয়নি।নওশাদ এখন দাড়িয়ে আছে এয়ারপোর্টে। আজ সানজিদার বাংলাদেশ থেকে কানাডা আসার কথা। কারো সময় না হওয়ায় সানজিদার একাই এতো দূর আসতে হলো।প্লেন এসে পৌছেছে অনেক আগে কিন্তু এখনো সানজিদার দেখা নেই,নওশাদের অফিস থেকে বের হতে একটু দেরি হয়েছিল তাই যথাসময়ে আসতে পারেনি। এই অল্প সময়ে তার সান কই গিয়েছে?নওশাদের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে,সানজিদার এখানে কোনো কিছু চিনার কথা না তাহলে কই গেল? তার মাথায় হঠাৎ ভয় ডুকলো তার সানের সাথে খারাপ কিছু হয়নি তো? পরক্ষণেই নিজেকে গালি দিলো এমন কিছু হবেনা।তার সৃষ্টিকর্তা তার সাথে এমন কিছু করবে না।কতক্ষণ উদভ্রান্তের মতো বসে থেকে উঠে দাড়ালো, এখানে বসে থেকে কিছু হবে না।তাকে আগে বাসায় যেতে হবে তারপর নিবিড়কে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে মিসিং ডায়েরি করাতে হবে।সে নিজের ফোন হাতে নিলো নিবিড়কে কল দিতে, হাতে নিয়ে দেখলো চার্জ শেষ। সে বিরক্ত হয়ে ফোনটা নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল।মাথার মাঝে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।বাড়ির গেটে ডুকে গাড়ি পার্ক করে বাসার দিকে হাঁটা দিতেই কেউ পিছন থেকে নওশাদ এর হাত টেনে ধরলো। নওশাদ পিছন ফিরে সানজিদাকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো, এই মেয়ে এইখানে কিভাবে এলো?
সানজিদা তার ভাবনায় দাড়ি টেনে দিয়ে বলল-
"আমাকে নিবিড় নিয়ে এসেছে, আপনার তো অনেক কাজ তাই বউয়ের কথাও ভুলে যান।"
নওশাদ দেখলো সানজিদার কথায় স্পষ্ট অভিমান সে কান ধরে বলল-
"সরি! কিন্তু তোমার আমাকে বলার উচিত ছিল তুমি চলে এসেছ তাহলে আমার তো এমন হাইপার হতে হতো না।"
"ফোন বন্ধ করে রাখলে কি আমি উড়ে গিয়ে বলব আজব।"
"ওহ আসলে চার্জ শেষ, ভুলে গিয়েছিলাম চার্জ দিতে। "
"এখন কথা হলো আপনি এখন কানে ধরবেন আমাকে অপেক্ষা করানোর জন্য। "
"আমি সরি বললাম তো!"
"আপনার ঐ শুকনো সরি দিয়ে কিচ্ছুটি হবে না।"
"আসো তাহলে তোমাকে ভিজে চুমু দি একটা। "
"ধুর, কানে ধরেন।"
নওশাদ এইবার পড়লো মাইনকার চিপায়। তার বউতো আঁচল বেধে নেমেছে তাকে শাস্তি দিতে।নওশাদ ইনোসেন্ট ফেস করে বলল-
"শাস্তি বদলানো যায় না?"
সানজিদা সুবোধ বালিকার মতে মাথা নাড়িয়ে বলল-
"যায় তো"
"তাহলে বদলাও "
"আগে ওয়াদা কর নওশাদ ভাই যে তুমি রাজি।"
নওশাদ বলল-
"আমি কোন বোনের কথাতে রাজি না, বউ বললে ভেবে দেখা যেত।"
সানজিদা জিব কামড়ালো,ভুলে মুখে চলে এসেছে, সে বিয়ের পর থেকে নওশাদকে ভাইয়া বলা ছেড়ে দিয়েছিল। দাদু বলেছে স্বামীকে ভাইয়া বললে গুনা হয়।সানজিদা বলল
"ভুলে চলে এসেছে, এখন বলো তুমি আমার কথায় তুমি রাজি?"
"আপনি যা বলবেন সানশাইন"
"তাহলে আমরা একদিন রাতে তুষার বিলাস করবো কেমন?"
"আচ্ছা দেখি আগে তুষার পড়া শুরু হোক "
"দেখি টেখি মানি না তুমি যদি না নাও তাহলে আমি নিবিড় এর সাথে চলে যাবো।"
তখনি আফিয়া বেগম ওদের দুইজন কে বাইরে এসে ডাক দিলো।সানজিদা আফিয়া বেগম এর সাথে কথা বলতে বলতে চলে গেল। নওশাদ তার সান এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ভিড়ভিড় করে বলল-
"আমার এলেমেলো জীবনে তুমি সানশাইনের মতো এসে আলো দিলে তাইতো তোমার নাম আমি সান/সানফ্লাওয়ার দিলাম,তুমি আমার জীবনের ফ্লাওয়ার, আমার সান।"
___________________________
পরিশিষ্ঠঃ
কানডার তুষার রাতে হাঁটছে একজোড়া কপোত-কপোতী ছেলেটা সামনে হাঁটছে যার পরনে একটা জ্যাকেট মাথায় কান টুপি, পিছন পিছন হাটতে থাকা মেয়েটার পরনে একটা লম্বা জ্যাকেট লম্বা চুল গুলো হাঁটু ছাড়িয়েছে। মাথায় নেই কোন শীতনিবারক বস্র যার জন্য ছেলেটা রাগ করে সামনে হাঁটছে, এতে মেয়েটার তেমন হেলদোল নেই বললেই চলে।হঠাৎ নওশাদ সামনে হাটতে হাটতে বলল-
"আমাকে ভালোবাসো সান?"
বলেই পিছু ফিরলো, সানজিদা প্রতিবারের মতো এইবার আর মুচকি হাসলো না, বরং নওশাদকে অবাক করে দিয়ে বলল-
"ভালোবাসা তো বলে বেড়ানোর জিনিস নয় নওশাদ, বরং এটা অনুভব করতে হয়, আমিতো তোমাকে প্রতিটি মুহূর্ত অনুভব করি, তাহলে কি আমি ভালোবাসি তোমাকে?"
নওশাদ কতক্ষণ অনুভূতি শুন্যের মতো তাকিয়ে রইলো। ততক্ষণে সানজিদাও জায়গায় থেমে গিয়েছে। হঠাৎ নওশাদ নিচু হয়ে হাত দুইদিকে প্রসারিত করে ডাকলো-
"সান কাম"
সানজিদা মেপল গাছের সারির মাঝে ছুটলো তার নওশাদ এর দিকে, কাছে এসে নওশাদ এর বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।নওশাদ দু'হাতে আগলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, সানজিদার পা মাটি থেকে কয়েক ফুট উচ্চতায় উঠে গেল। নওশাদ কপালে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে বলল-
"আজও বৃষ্টি নামুক.,
ভিজিয়ে দিয়ে যাক তোমাকে আমাকে।
আমি বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটাকে সাক্ষী রেখে বলতে চাই,
কোনো এক বর্ষণ_সন্ধ্যায়_তোমার_আগমণ।
~সমাপ্তি~