#বর্ষণ_সন্ধ্যায়_তোমার_আগমণ
পর্ব -০৯
রাতের খাবার এর জন্য সবাই ডাইনিং বসে আছে।খাবার স্রাব করছে আফিয়া বেগম ও রোকসানা বেগম, এইবাড়িতে অনেক মেড থাকলেও এই বাড়ির খাবার রান্না খাবার সার্ব করার কাজ মহিলারাই করেন, এটা তাদের বাড়ির নিয়ম বলা যায়।আজমেরি বেগম এইভাবেই শিখিয়েছে, এতো দিন তিনি বোনের বাড়িতে গিয়েছিল বেড়াতে, আজ সন্ধ্যায় এসেছে। সাথে তার সবসময় বাধা কাজের মেয়ে মিনি।মিনি সবসময় সানজিদার দাদুর সাথে থাকে বলা যায়, উনি যেখানে যায় সেখানে তার যাএা।সানজিদা দাদুর পাশে বসে আছে, তিনি সানজিদার পাতে এটা ঐটা তুলে দিচ্ছে। সবার খাবার সার্ব শেষে আফিয়া বেগম ও রোকসানা বেগম বসলেন। আমজাদ সাহেব সবার উদ্দেশ্যে বললেন -
" আমি আফজাল এর সাথে কথা বলেছি,সে নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত, আফজাল রাজি আমি বলেছি খুব শ্রীগই আমরা তোমার মেয়ের হাত চাইতে আসছি।"
রুজিণা বেগম শুনে খুশি হলেন, সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেল।একটা ঝামেলা মিটে গেছে এটাই অনেক।এর মধ্যে আজমেরি বেগম খাবার শেষ করে উঠে চলে গেল,তার খাবারের পর ঔষধ আছে তাই সে নাতী নাতনী দের সাথে গল্প করতে পারলো না। সে উঠতেই সানজিদা পিছনে পিছনে উঠে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসে টিভি দেখতে লাগলো।সে দেখতে শুরু করলো টম এন্ড জেরী এটা না দেখলে তার খাবার হজম হয় না। তাঁর পিছনে নওশাদ উঠে এসে সাথের সোফায় বসলো, সেদিকে মেয়েটার কোন খবর নেই। এইদিকে নিশু আর নিবিড় একটা আরেকটা কে চিমটি কাটছে তাদের বুঝা হয়ে গেছে নওশাদ প্রেমে পড়েছে।সানজিদা দের বাসাটা এক তলায় একটা বড় হলরুম যার একদিকে ড্রয়িংরুম অন্যদিকে ডাইনিংরুম, ভিতরে বড় করে রান্নাঘর। হলরুমের মধ্যেভাগে সিড়ি উপরে উঠার। সিড়ি দিয়ে উঠলেই সামনে পড়া ঘরটা সানজিদার দাদুর, ডানে প্রথম ঘর নওরাজ সাহেবের তারপর এর টা আমজাদ সাহেবের। তারপর গেস্ট রুম আর বাম দিকে প্রথম ঘর নওশাদ এর তারপর সানজিদার তারপর নিবিড়ের তারপর গেস্ট রুম। সানজিদা মনেযোগে বিঘ্ন ঘটায় নওশাদ এর গলার স্বরে -
"এইগুলা কি দেখ তুমি?"
"তোমাকে তো দেখতে ডাকিনি"
"আমি খেলা দেখবো তাই এসেছি."
সানজিদা সহজ গলায় বলল -
"আমি তো দিবো না নওশাদ ভাইয়া, তুমি আসতে পারো।"
"কিন্তু আমি যাবো না "
নওশাদ এর একরোখা জবাবে বিরক্ত হয়ে সানজিদা উঠে চলে গেল। মুখে উচ্চারণ করলো-
"ধুর ভালো লাগেনা"
নওশাদ মুচকি হাসলো, মেয়েটাকে জ্বালাতন করতে তার ভালো লাগে। সে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় আসার পর তার মা তাকে সব বলেছিল।
____________________________
সানজিদা ছাদে হাঁটছে এখনো কেউ আসে নি। আজ তারা রাতে ছাদে গল্প করবে বলে ঠিক করেছে তাই তাসফিয়া কে যেতে দেয়নি সানজিদা । মেয়েটা অবশ্য যেতে চেয়েছিল সানজিদা না শোনার ভান করে এড়িয়ে গেছে। সানজিদা দোলনায় দোল খাচ্ছে, প্রকৃতি এখন হিম শীতল, কোথায় যেন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকছে , রাস্তার নিয়ন আলোরা সানজিদার বাসার ছাদে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। সানজিদার ভাবনার মাঝে, মিনি এসে ছয় কাপ কফি দিয়ে গেল। কফি গুলো দোলনার সামনে গোল টেবিলটায় রাখলো,টেবিলের সাথে চারটা চেয়ার, এটা সানজিদার বাবা করেছিলেন বুড়ো বয়সে আমজাদ সাহেব ও নওরাজ সাহেব একসাথে বসে আগের দিনের গল্প করতে,সাথে থাকবে তাদের সহধর্মিণীরা। তার ভাবনার মাঝেই সবাই এসে বসল, নওশাদ সানজিদার পাশে দোলনায় এসে বসল।নিশাত বসেই নওশাদ এর দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো।ছেলেটা সারাক্ষণ সানজিদার পিছে পিছে কি করে?তার ভাবনার মাঝেই তাসফিয়া বলল -
"এইবার নিশাত সাহেবের সাথে বিয়ে ভাঙতে কি প্ল্যান করেছিলি সানজু?"
নিশাত অবাক হয়ে জানতে চাইলো,
"ও কি সব সময় বিয়ে ভাঙ্গে? "
তাসফিয়া ভাবলেশহীন ভাবে বলল—
"হু"
নিবিড়, তাসফিয়া ছাড়া বাকি তিনজন বিস্ময় নিয়ে তাকালো।সাবজিদা ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। নিশাত অবাক বিস্ময় চাপিয়ে বলল-
"আগে কয়টা ভেঙ্গেছ?"
"বেশি না পাঁচ ছয়টা হবে হয়তো? "
"পাঁচ ছয়টা কম?"
"আমারতো কমই মনে হয়"
"কিভাবে ভাঙ্গতে?"
"প্রথমবার বলেছিলাম বয়ফ্রেন্ড আছে, তাই ছেলেই বিয়ে ভেঙে দিয়েছিল, দ্বিতীয় বার ও একই,তবে তৃতীয় বার বাঁধলো বিপওি আম্মু আগে থেকেই তাদের সব বলে দিয়েছিল। আমি বুঝেছিলাম এইবার আর সোজা কথায় হবে না। তাই ছেলের নাম্বার নিলাম তাকে কল দিয়ে দেখা করতে বললাম সে আসলো, এর আগের দিন বাবাকে সব বললাম বাবা কিছু ছেলে ঠিক করে দিলো তাদের মাইর খেয়ে ঠিক হয়ে গেল তারপর আর কি বিয়ে ভেঙে দিলো এইভাবে দুই তিনবার হওয়ার পর আম্মুর মনে সন্দেহ হলো আম্মু নাম্বার দেওয়া বন্ধ করলো আপনার বেলায়।"
"ছেলেরা কিছু বলতো না এসে?"
"না নিষেধ করা হতো।"
"আমাকে কি করার ইচ্ছে ছিল?"
"তেমন কিছুই না প্রথমে অনুরোধ করতাম তারপর না মানলে কিডন্যাপ করে দুইদিন কোন গোডাউনে ফালিয়ে রাখতাম। পই পই করে বিয়ে ভেঙে দিতেন।"
নওশাদ মুচকি হাসলো মনে মনে বলল "মেয়েটা বড্ড পাঁজি অথচ সে মেয়েটাকে বোকা মনে করেছিল।"নওশাদ শুধালো -
"আচ্ছা যদি না ভাঙতো?"
"বাপ বাপ করে ভাঙতো,দুইটা দিন আলো বাতাস ছাড়া না খেয়ে পড়ে থাকা কম কথা নয়।"
সবাই চোখ বড় বড় করে তাকালো।নিবিড় বলল-
"খাবার দিতি না?"
"মেহমান নিয়ে যাইনি তো।"
নিবিড় আওয়াজ ছোট করে বলল-
"নওশাদ ভাইয়ার কপালে দুঃখ আছে। "
"আমিও তাই দেখছি মামা"
তাদের কথার মাঝে সানজিদা বলে উঠলো -
"তোমার সাথে নওশাদ ভাইয়ার কথা হয়না?"
নওশাদ এই ভয়ে ছিল হয়ে গেল সেটা। সে কল এসেছে বলে ছাদের অন্য পাশে চলে গেল।নিশাত বলল-
"হয়তো তোমাদের বাসায় আসার আগেও হয়েছিল। "
"উনি আমাকে তোমার নাম্বার দেয়নি, আমি চেয়েছিলাম আর বলল নেই"
নিশাতের সন্দেহ ঘারো হলো এর মাঝেই সানজিদার ডাক পড়ায় সে নিচের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো,যাওয়ার বলে গেল সে আর আসবে না তাসফিয়া আর নিশু যেন তার রুমে চলে যায় সবাই সায় জানালো।সানজিদা যেতেই নিশু বলল-
"দেখলি আমি বলেছিলাম না?"
"নিশু তাহলে ভাইয়া সত্যি প্রেমে পড়লো বলে,"
নিশাত না বুঝে জিজ্ঞেস করলো,নিশু সব খুলে বলতেই নিশাত বুঝে গেল।সে বলে উঠলো -
"তাইতো বলি যে সবসময় আমাকে বলতো জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না সেই বা কেন আমাকে বলে তুই কি তোর মায়ের জন্য রাজি হচ্ছিস?"
সবাই না বুঝে জানতে চাইলো,নিশাত সেদিনের ঘটনা বলতেই সবাই বুঝে গেল।তাসফিয়া বলল-
"কিন্তু সানজু তো প্রেমে পরার মতো মেয়েনা। "
নিবিড় ও সায় জানালো। তখনি পিছন থেকে নওশাদ বললো-
"আমাকে নিয়ে কি গবেষণা হয় শুনি?"
নিশাত বলল-
"তুই প্রেমে পড়েছিস সানজিদার।"
#চলবে,,,,