#বর্ষণ_সন্ধ্যায়_তোমার_আগমন
পর্ব -৮
" নিশাত ভাইয়া এবং তাসফিয়া একজন অরেকজনকে ভালোবাসে"
সানজিদার এই এক লাইনের বক্তব্যই যেন ভরা মজলিসে বাজ পড়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সবাই অবাক হয়ে তাকালেন সানজিদার দিকে শুধু রোজিনা বেগম ছাড়া কারণ তিনি আগেই অবগত ছিলেন তাসফিয়ার ব্যাপারে। তাঁর ছেলে মেয়ে তাঁর কাছে কিছুই গোপন করে না। মেয়েটাকে তাঁর ছেলে কম জায়গায় খুঁজে নি।কিন্তু সঠিক ঠিকানা না থাকায় খুঁজে পায়নি।আজ দুই বছর পরও তাসফিয়াকে দেখে ওনার চিনতে বেগ পোহাতে হয়নি।কারণ উনি ছেলে মোবাইলে মেয়েটার ছবি দেখেছিল। আমজাদ সাহেব শান্ত স্বরে বলল-
"আমি জানি আমার মেয়ে বিয়ে ভাঙতে আর যাই হোক এতো বড় মিথ্যা বলবে না,তাই পুরা কাহিনী আমাদের বল"
সানজিদা সংক্ষিপ্ত ভাবে সবাইকে সবটা বলল।
সব শুনে আমজাদ সাহেব বললেন -"আমি আফজাল থেকে এটা আশা করনি।তারীফ থেকে তো একেবারেই না, সে নিজেও তো রিসা কে পছন্দ করে বিয়ে করেছিল, তাহলে বোনের বেলায় সমস্যা কোথায়? অন্তত ছেলে কেমন খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে পারতো।তাসফিয়া মা তুমি চিন্তা কর না আমি কালই আফজাল এর সাথে এই ব্যাপারে কথা বলব."
সবাই খুশি হলো আমজাদ সাহেবের উপর, সানজিদা এমন একজন কে বাবা হিসেবে পেয়ে গর্ব করলো।রোজিনা বেগম তাসফিয়াকে নিজের পাশে বসিয়ে থুতনিতে হাত রেখে বলল-
"বাহ মাশাআল্লাহ, আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হয়"
তাসফিয়া লাজুক হাসলো।নিশু তাসফিয়ার হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যেতে সানজিদার উদ্দেশ্যে বলল-"সানজি আমি তাসফিয়াকে নিয়ে ছাদে যাচ্ছি, তুইও চলে আয়"
নিশাত নিশুর উদেশ্যে বলল-
"তোর ভাবি হয় সম্মান দে"
নিশু ভেংচি কেটে বলল-
"এ্যা আসছে আমাকে সম্মান শিখাতে যাও ভাগো"
সানজিদা আনমনেই হাসলো,নিশু তাদের সমান হলেও কখনো কথা হয়নি বললেই চলে।অথচ মেয়েটা এমন ভাবে কথা বলছে যেন জনম জনমের পরিচয়। সানজিদা নিশুর উদেশ্যে বলল-
"আমি শাড়ি চেঞ্জ করবো তোমরা যাও,আর নিবিড় তুই নিশাত ভাইকে গেস্ট রুমে নিয়ে যা ফ্রেশ হতে"
বলেই সে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো।
_________________________________
তাসফিয়া ছাদে হাঁটছে,নিশু তাকে এখানে এনে বলেছে সে একটা জিনিস আনতে যাচ্ছে, বলেই লা পাত্তা হয়ে গেল। তাসফিয়া দোলনায় গিয়ে বসলো । এই দোলনা তার খুব প্রিয়, সে প্রতিবার আসলে এখানটায় বসে চা খেতে খেতে দুইজন গল্প করে,কত কথা বলে সানজিদা সে শুধু চুপ করে শুনে, অথচ একটা সময় সে বলত সানজিদা শুনতো।তাসফিয়া আকাশের দিকে তাকালো কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি আসবে হয়তো।হঠাৎ পিছন থেকে চিরচেনা কন্ঠটা ঢেকে উঠলো -
"তাসু"
তাসফিয়া অভিমানী স্বরে বলল-
"আমি আপনাকে চিনি?"
নিশাত আলতো করে হাসলো,তাসফিয়ার সেটা অগোচরে রয়ে গেল। সে বলল-
" অভিমান করার কথা আমার অথচ অভিমান করে বসে আছে আমার অভিমানীনি।আমার উপর এতো অবিচার কেন?"
তাসফিয়া উত্তর না দিয়ে বলল-
"আজ আমাকে না পেলে আপনি সানজুকে বিয়ে করতেন?"
নিশাত একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো, মেয়েটা যে এই কারণে অভিমান করে ছিল তা তার জানা ছিল।সে কিছু বলল না চুপ থাকলো, তাসফিয়া নিজের উত্তর পেয়ে গেল।সে উঠে বাহিরের দিকে পা বাড়ালো তখনি কেউ তাকে পিছন থেকে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে, তাসফিয়া নিজেকে তার থেকে ছাড়াতে ব্যর্থ চেষ্টা করলো, পারলো না। নিশাত বলল-
" আমি মনে করেছি তুমি আমায় ভুলে গিয়েছ।তাই আম্মুর কথায় বিয়েতে রাজি হয়ে যাই।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম, আজ বুঝলাম তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো। আমায় ক্ষমা করে দাও তাসু, আমি তোমাকে তোমার চাইতে বেশি ভালোবেসে দেখিয়ে দেব, যে আমিও ভালোবাসতে জানি।"
তাসফিয়া আর কিছু বলল না। প্রিয় পুরুষটির বুকে পরম আবেশে লেপ্টে রইলো।
____________________________
দরজায় ঠক ঠক শব্দে বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো নিবিড়। এখন কে এসেছে তাকে জ্বালাতে তা খুব ভালো করেই জানে সে। বিরক্ত হয়ে উঠে বসল। আজ দরজা না খুললে যে এ মেয়ে যাবে না তা বেশ বুঝতে পারলো। দরজা খুলতেই নিশু নিবিড়ের হাত ধরে টেনে ছাদের দিকে ছুটলো। নিবিড় ভড়কে গেলেও নিজেকে সামলে নিল।এই পাগল মেয়ে থেকে সে এর বেশি কিছু আশা করেও না। নিশু ছাদে এসে তাসফিয়ারা যে পাশে তার অন্য পাশে গিয়ে দাড়ালো। তারপর
নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল—
"নিবিইড়া আমার একটা ডিপ প্রশ্ন? "
নিবিড় ভাবলেশহীন ভাবে বলল—
"কি বল?"
"নওশাদ ভাইয়া কইরে? সবাই আছে তবে তাকে কোথাও দেখলাম না কেন?
নিবিড় এইবার ভেবে দেখলো। আসলেই তো, নওশাদ কই গেল। নিশাতরা আসার পর থেকে একবারও দেখেনি। অথচ ওদের দুইজনের গলায় গলায় ভাব।নিবিড় খেয়াল করেছে সানজিদার বিয়ের কথা শুনার পর থেকে নওশাদ কেমন জানি বদলে গেছে। নওশাদের মত রশিক মানুষ একেবারে চুপ। তাহলে কি সে যা ভাবছে তাই। সে নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল—
" নিশুরে, ডাল মে কুচ কালা লাগরাহি হে।"
" তোর কালা সাদা বাদ দিয়ে, ঝেড়ে কাশ। "
"আমার মনে হচ্ছে ভাইয়া লাভস সানজিদা, বিকজ সানজিদার বিয়ের কথা শুনে ভাইয়ার মতো রসিক মানুষ ও চুপ হয়ে গেল ভেবে দেখ।কিন্তু ওদের তো আগে কথা হতো না, তাহলে কেমনে কি?"
"আরে প্রেমে পড়তে হাজার বছর লাগে না শুধু পাঁচ মিনিট ও যথেষ্ট, বিষয়টা ঘটে দেখতে হবে।"
নিবিড় "হু" বলে সম্মতি দিল।
___________________________
সানজিদা নিজের রুমে এসে শাড়িটি খুলে একটা সাদা টপস নিয়ে শাওয়ার নিতে গেল।কিছুক্ষণ পর এসে বারান্দায় দাঁড়ালো, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সানজিদাদের বারান্দা গুলোয় গ্রিল না থাকায়, খুব সহজে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। সে ভেজা তোয়ালেটা বারান্দায় নেড়ে দিয়ে রুমে ফিরে আসতে গিয়ে চোখ পড়লো বাগানে দাড়ানো ছেলেটার দিকে।নওশাদকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে সে ছুটে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাগানের দিকে গেল।নওশাদ এর ইন- করা টি-শার্টটা তখন বৃষ্টিতে ভিজে অগোছালো হয়ে গিয়েছে, চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে। সানজিদা পিছন থেকে নওশাদ এর উদ্দেশ্যে বলল-
" নওশাদ ভাইয়া তোমার কি প্রেমিকার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে নাকি? যে তুমি এইখানে দাড়িয়ে দুঃখ বিলাস করছো?"
নওশাদ অস্ফুট স্বরে বলল-
"হু"
"কি বললে?বৃষ্টিতে না ভিজে বাসায় চলো।"
হঠাৎ নওশাদ আকুতিভরা স্বরে বলল-
"সান তুমি নিশাতকে বিয়ে কর না প্লিজ। "
"মানে?"
"কিছু না, তুমি যাও আমি পরে আসছি। "
"আমার সাথে চল"
নওশাদ অকস্মাৎ বলল-
"সবসময় তোমার সাথে চলতে দিবে?"
"হু দিবো, এখন চলো।"
নওশাদ হাসলো মেয়েটা বুঝে শুনে উওর দেয়নি এটা সে বুঝেছে। সে শান্ত স্বরে বলল-
"কবে তারিখ ঠিক করা হলো?"
"এভাবে আমার বিয়ে নিয়ে পড়েছ কেন? মনে হচ্ছে আমার বিয়ে করিয়েই দম নিবে।বিয়ে হবে না নওশাদ ভাই,নিশাত ভাই তার দুইমাসের প্রেমিকা তাসফিয়াকে পেয়ে গিয়েছি, তাই আমার সাথে বিয়ে ক্যান্সেল"
নওশাদ না বুঝে বলল-
"এ্যা…?"
হঠাৎ ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো।সানজিদা আশেপাশে তাকালো এখান থেকে বাসা পর্যন্ত যেতে তারা পুরো পুরি ভিজে যাবে।সানজিদা নওশাদ এর হাত ধরে ছুটতে লাগলো কদম গাছটির দিকে, গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিতে। সানজিদার দৌঁড়ানোর সাথে তার হালকা করে বাধা খোঁপা খুলে গেল, এলো চুল গুলো পিঠময় ছড়িয়ে পড়ল।নওশাদ সানজিদার কথার মানে বুঝতে পেরে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তাঁর সান এখন শুধুই তাঁর।। এই বৃষ্টি একই সাথে তিন জোড়া কপোত-কপোতীকে ভিজিয়ে দিয়ে গেল।যাদের প্রেমের সম্পূর্ণ ছন্দ ভিন্ন অথচ তারা সবাই প্রেমে পড়বে।
আফিয়া বেগম নিজের রুম থেকে বের হতে গিয়ে হঠাৎ জানালায় চোখ পড়লো।সানজিদা এবং নওশাদ কে গাছের দিকে দৌড়াতে দেখে কিছু একটা ভেবে আনমনেই হাসলো।
#চলবে,,,,